নারীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি

নারী কর্মীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি

স্বাস্থ্য ঝুঁকি এমন এক বিষয় যা মানুষকে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভবনাকে আরো বাড়িয়ে দেয়।

অনেক স্বাস্থ্য ঝুঁকি আছে যা নারী ও পুরুষের জন্য একই হলেও কিছু স্বাস্থ্য ঝুঁকি আছে যা নারীদেরকে আলাদাভাবে প্রভাবিত করে। যেমনঃ হার্ট এটাক, হতাশা ও বিষণ্ণতা, হাড়ে এক ধরণের আরথাইট্রিস, মূত্রাশয়ে ইনফেকশন বা ইউটিআই।

নারীরা তাদের জৈবিক প্রজনন প্রক্রিয়ার সময় স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ব্যাপারে বিশেষ করে বিপদ সংকুল হয়ে থাকেন, যেমনঃ

  • গর্ভধারণের সময় এবং সন্তানকে বুকের দুধ পান করানোর সময়ে
  • ঋতুচক্র বা মাসিক এর সময়ে

সন্তানধারণের সময় পুষ্টিকর খাবার

পুষ্টিকর ও সুষম খাবার গর্ভধারণের সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন, আমিষ, আয়রন, মিনারেল, ফলিক এসিড প্রভৃতি নিয়মিত খাওয়া দরকার।

  • ক্যালসিয়াম এর জন্যঃ দুধ, দই, পনির খাওয়া দরকার
  • ভিটামিন-ডি এর জন্যঃ মুখে খাওয়ার ভিটামিন-ডি ক্যাপসুল নেওয়া দরকার ও শরীরে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো লাগানো দরকার
  • আয়রন এর জন্যঃ সবুজ শাক-শবজী নিয়মিত খাওয়া দরকার
  • প্রোটিন (আমিষ) এর জন্যঃ ডাল, মাছ, মাংস ইত্যাদি নিয়মিত খাওয়া দরকার

কর্মক্ষেত্রে গর্ভবতী নারী

গর্ভবতী কর্মীকে এমন কাজ দিতে হবে যাতে করে তার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর না হয়।

গর্ভবতী কর্মীকে ভারি কোনকিছু উঠানো কিংবা পেশী ও মেরুদণ্ডের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে- এমন কাজে নিয়োগ থেকে বিরত রাখতে হবে।

কর্মক্ষেত্রে ধূলাবালি, ধোঁয়া, রাসায়নিক দ্রব্যাদি ও গ্যাস ইত্যাদি থেকে বায়ু দূষিত হয় এমন স্থান থেকে গর্ভবতী কর্মীদের দূরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

কর্মক্ষেত্রে উচ্চ শব্দ, অত্যাধিক গরম বা অত্যাধিক ঠান্ডা- এমন পরিবেশ থেকে গর্ভবতী কর্মীদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রসবকালীন ছুটি

একজন গর্ভবতী কর্মী যিনি সন্তান প্রসবের অব্যবহিত পূর্ব পর্যন্ত ন্যুনপক্ষে ৬ মাস উক্ত প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন তিনি মজুরীসহ মোট ১৬ সপ্তাহ (সন্তান প্রসবের আগে ৮ সপ্তাহ এবং সন্তান প্রসবের পরে ৮ সপ্তাহ) মাতৃত্বকালীন ছুটি পাবার অধিকারী হবেন।

সন্তান প্রসবের সময় যদি কোন নারী কর্মীর দুই বা ততোধিক সন্তান জীবিত থাকে, তাহলে উক্তরূপ সুবিধা প্রদেয় হবে না। তবে এক্ষেত্রে তিনি কোন ছুটি পাবার অধিকারী হলে তা পাবেন৷

উতসঃ বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬: চতুর্থ অধ্যায়ঃ প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা, সেকশন ৪৬ (প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা প্রাপ্তির অধিকার এবং প্রদানের দায়িত্ব)

নারী কর্মীদের ঋতুচক্র বা মাসিকের সময়

 

কাপড়ের ব্যবহার

  • সর্বোচ্চ ৩ ঘন্টা পরপর ব্যবহৃত কাপড়ের টুকরা পালটে ফেলতে হবে

  • ফ্যাক্টরীর পরিত্যক্ত কাপড়ের টুকরো ব্যবহার করা যাবেনা
  • ব্যবহৃত কাপড় সাবান দিয়ে ভালোভাবে পরিস্কার করতে হবে ও পুনরায় ব্যবহারের পূর্বে রোদে ভালো করে শুকাতে হবে

 

স্যানিটারি প্যাড ব্যবহারের ক্ষেত্রে

  • স্যানিটারি প্যাড ৬ ঘন্টা পরপর পাল্টাতে হবে
  • ব্যবহৃত স্যানিটারি প্যাড ঢাকনাযুক্ত আবর্জনা বাক্সে ফেলতে হবে
  • স্যানিটারি প্যাড বা কাপড় পাল্টানোর পর ভালভাবে সাবান পানি দিয়ে হাত পরিস্কার করতে হবে

 পানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ

পানি নারীদের জন্য আরো বেশী গুরুত্বপূর্ণ, কারণ নারীরা মূত্রাশয়ে সংক্রমণের ক্ষেত্রে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

আপনি কি জানেন যে দীর্ঘ সময় প্রস্রাব আটকে রাখলে মূত্রাশয়ে সংক্রমণ (ইউটিআই) দেখা দেয়?

কাজেই, মনে রাখতে হবে পর্যাপ্ত পানি পান করা ও প্রয়োজনমত টয়লেটে যাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এ বিষয়ে আরো জানতে “নিরাপদ পানি পান” সেকশন পড়ুন!

লিঙ্গ–ভিত্তিক সহিংসতা

আপনি কি জানেন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন ও নীতিমালাতে কী ধরণের বিধান আছে?

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০

এই আইনে ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন, এসিড সন্ত্রাস এবং যৌতুক সংক্রান্ত অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান আছে।

কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেকোন শারীরিক, মানসিক অথবা যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ও তদসংক্রান্ত অপরাধ নিরুপনে মহামান্য হাইকোর্ট ২০০৯ সালে কিছু নীতিমালা জারি করেছেন। 
সে মোতাবেক প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানে “কমপ্লেইন কমিটি” (অভিযোগ কমিটি) গঠনের জন্য নির্দেশ আরোপ করা হয়েছে।

আপনি কি জানেন যে আপনার ফ্যাক্টরিতে কমপ্লেইন কমিটি কার্যকর আছে কিনা?

আপনার সহযোগিতার প্রয়োজন হলে

কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা ও নির্যাতন থেকে শ্রমিক ও কর্মীদের রক্ষা করার জন্য সহজ অভিযোগ পদ্ধতি ও এর প্রতিকার নিশ্চিত করার ব্যবস্থা কার্যকর থাকতে হবে।

 

পারিবারিক কারণে সৃষ্ট মানসিক চাপ, মানসিক আঘাত অথবা বিষন্নতা কিংবা কর্মক্ষেত্রে শারীরিক নির্যাতন ও হয়রানি থেকে মুক্তি পেতে নিচের নাম্বারে ফোন করুনঃ

  • সরকারী হেল্পনাইন নাম্বারঃ ১০৯
  • গারমেন্টস কর্মীদের জন্য সরকারী হেল্পনাইন নাম্বারঃ ১৫৩৫৭